একসময় একজন বিধবা ছিল, তার দুটি মেয়ে ছিল। বড় মেয়ে ছিল তার মায়ের মত, অনেক অহংকারি, অভদ্র এবং রাগি । কেউই তাকে এবং তার মাকে পছন্দ করত না। কিন্তু ছোট মেয়েটি ছিল সদয়, স্নেহশীল, নম্র এবং সে ছিল বেশ সুন্দরী। মানুষ তাকে অনেক ভালোবাসত কিন্তু তার মা তাকে একদমই পছন্দ করত না। তাকে দিয়ে সব কাজ করাতো। 

ছোট মেয়েটিকে প্রতিদিন পানি আনতে নদীতে যেতে হত। যা ছিল  প্রায় ১ ঘন্টার পথ। 

একবার, মেয়েটি যখন নদীর পাড়ে  পানি নিচ্ছিল, তখন এক দরিদ্র বুড়ো মহিলা তার কাছে এসে পানি পান করতে  চাইলেন।

সে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার জগটি ধুয়ে ফেলার পরে,  সবচেয়ে গভীর এবং পরিষ্কার জায়গা থেকে  পানি তুলল এবং জগটি ধরে মহিলাকে পানি পান করালো।  

মহিলাটি কয়েক চুমুক জল নিয়ে মেয়েটিকে বলল - তুমি এত ভাল, এত দয়ালু। আমাকে পানি পান করানোর জন্য ধন্যবাদ।আমি তোমাকে   উপহার হিসাবে কিছু দিতে চাই। 

আসলে বুড়া মহিলাটি একটি পরী ছিল, যে ইচ্ছাকৃতভাবে একটি সাধারণ  মহিলার চেহারা ধরেছিল যাতে দেখতে পারে মেয়েটি সম্পর্কে লোকে যা বলে তা কি সত্যি নাকি। অর্থাৎ মেয়েটি কি আসলেই ভালো মানুষ নাকি। 

বুড়া মহিলাটি বুঝতে পারে যে লোকে যা বলে তাই সত্যি এবং সে খুব খুশি হয়। সে মেয়েটিকে বলে -তুমি এখন থেকে যত  শব্দ বলবে, তোমার  ঠোঁট থেকে তত  ঝরবে  ফুল বা হিরা । বিদায় ভালো মেয়ে!  

মেয়েটি খুব অবাক হলো। সে বুড়ির কথায় খুব একটা পাত্তা দিল না। সে বাড়িতে ফিরে এল। বাড়িতে আসতে দেরি হওয়ায় তার মা তকে বকা 
ঝকা করতে লাগল।
মেয়েটি বলল - আমাকে মাফ করে দাও, মা।আজ আমি সত্যিই দেরি করে ফেলেছি।

কিন্তু এই কথাগুলো বলার সাথে সাথেই তার ঠোঁট থেকে বেশ কয়েকটি গোলাপ এবং দুটি বড় হীরা পড়ে গেল।
তার মা  সেগুলো দেখে অবাক হয়ে গেলো আর বলল- তোমার কি হয়েছে?  তোমার মুখ থেকে ফুল ,হিরা কেন পড়ছে!?  

মেয়েটিও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তারপর তার মনে পড়ে যে বুড়ো মহিলাতো তাকে এই উপহারটাই দিয়েছিল। সে তার মাকে সব খুলে বলে। 

এই শুনে তার লোভী মা বড় মেয়েকেও পানি আনতে পাঠালো আর বলল- নদীর পাড়ে  এক বুড়া মহিলা যদি পানি পান করতে  চায় তাইলে তাকে পানি পান করাতে। 

বড় মেয়ে  নদীর পাড়ে গেল।সে পানি নিয়ে বুড়া মহিলার জন্য অপেক্ষা করছিল। হঠাৎ এক অল্প বয়স্ক মহিলা তার কাছে এল আর বলল - ওহে বালিকা, তুমি কি আমাকে তোমার জগ থেকে পানি পান করতে দিবে? 

বড় কন্যা ভাবল- এতো বুড়া মহিলা নয়। তাইলে আমি একে কেন দেব? আমি দিব না। 

বড়মেয়েটি তাকে অত্যন্ত কর্কশ ভাবে বলল- নাহ! আমি তোমাকে দিতে পারবো না। তুমি নিজে নিয়ে খাও নদী থেকে।
 
অল্প বয়স্ক মহিলাটির তার এ ব্যবহার দেখে খুব খারাপ লাগল। আসলে এবার পরীটি বুড়ার সাজে না এসে অল্প বয়স্ক মহিলার সাজে এসেছিল।সে তার আসল রূপ ধারন করল। আর সে বড় মেয়েটিকে অভিশাপ দিল -তোমার মুখ থেকে প্রতিটা শব্দের জন্য একটি করে সাপ এবং পাথর পড়তে থাকবে। 

বড় মেয়ে বাড়ি ফিরে আসে আর তার মার সাথে দেখা করে।
 তার মার তাকে জিজ্ঞেস করে - কি হয়েছে?  কি হয়েছে?  এখন কি তোমার মুখ থেকে হিরা পড়বে?  
মেয়েটি বলল- না মা! 

তার এ কথা বলার সাথে সাথে কিছু সাপ আর পাথর নিচে পড়লো। সে এবং তার মা তা দেখে ভয় পেয়ে গেলো৷ মেয়েটি ভয়ে চিৎকার করতে লাগলো। আরো সাপ তার মুখ থেকে পড়তে লাগলো। সাপ গুলো ছিল বেশ বিষাক্ত। 
কয়েকটি সাপ লোভী মা আর বড় মেয়েকে কামড়ে দিল আর তারা সেখানে মরে গেলো। 

কিন্তু,,, ছোট মেয়েটি বাড়ির বাইরে গরু চড়াচ্ছিল সে আসার আগে আগেই সাপ গুলো বাড়ির বাইরে জঙ্গলে চলে যায়। 

সে বাড়ি ফিরেই দেখে তার মা আর বোন সাপের কামড় খেয়ে মারা গেছে। সে কিছুক্ষন কাঁদে। তারপর সে নিজেকে সামলিয়ে নেয়। সে নিজের জীবিকার জন্য তার মুখ থেকে পড়া হিরা বিক্রি করে। আর অনেক বড়লোক হয়ে যায়। এভাবেই সে সুখে শান্তিতে বসবাস করে। 

অনুবাদক :আদিলা নুর তাবাসসুম