এক সময় এক গ্রামে একজন জুতা কারিগর  বাস করত। সে খুব গরিব ছিল।  তার কাছে মোটেও টাকা ছিল না।তার কাছে শুধুমাত্র এক জোড়া জুতার জন্য চামড়া বাকি ছিল। 

 এক সন্ধ্যায় তিনি  জুতার  জন্য ওই চামড়া কেটে রেখেছিলেন। তিনি পরদিন সকালে জুতার বানাতে চামড়া সিলাই করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি তার ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন।
পরদিন সকালে তিনি ঘুম থেকে উঠলেন এবং জুতা তৈরি করতে গিয়ে দেখেন যে জুতা ইতিমধ্যে সেলাই করা হয়ে গেছে। 
জুতা জোড়া টি তৈরি দেখে তিনি খুব অবাক হলেন। তিনি জুতাগুলো নিলেন এবং সেগুলো সাবধানে পরীক্ষা করতে লাগলেন।

তিনি দেখলেন এটি বেশ ভালভাবে সেলাই করা হয়েছে। একটি সেলাইও ভুল হয়নি। এটি তাত্ক্ষণিকভাবে প্রমাণিত হয়েছিল যে একজন দক্ষ কারিগর সেই জুতাগুলো সেলাই করেছে । 

তিনি জুতা জোড়া নিয়ে বাজারে গেলেন এবং খুব  শীঘ্রই তিনি জুতার জন্য একটি ক্রেতা পেয়ে গেলেন ।  ক্রেতাটি জুতা জোড়া টি এতই পছন্দ করেছিলেন যে তিনি ওগুলোর জন্য প্রচুর অর্থ প্রদান করেছিলেন। জুতা কারিগর সেই অর্থ দিয়ে  দুই জোড়া জুতার জন্য চামড়া কিনতে পেরেছিল। তিনি সন্ধ্যায় দুজোড়া  জুতার জন্য কাপড় কেটে রাখেন। এবং আগের বারের মতো সকালে জুতা সেলাই করার সিদ্ধান্ত নেন। 

তিনি সকালে উঠেন এবং দেখেন  দুই জোড়া জুতোই প্রস্তুত।

  তিনি শীঘ্রই ক্রেতাদের পেয়ে  গেলেন।  তারা বুট খুব পছন্দ করল আর তারা জুতা কারিগরকে অনেক টাকা দিয়েছিল, এবং তিনি চার জোড়া জুতার জন্য চামড়া কিনতে পেরেছিলেন।
 
তিনি এবারও সন্ধ্যায় চামড়া প্রস্তুত করে রাখলেন এবং দেখলেন সকালে  জুতাগুলো প্রস্তুত থাকে নাকি। 

পরের সকালেই তিনি দেখলেন জুতাগুলো প্রতিদিনের মতো প্রস্তুত আছে। এভাবে কয়েকদিন চলে যায়। জুতা কারিগরের দরিদ্র ও ক্ষুধার্ত জীবনের অবসান ঘটে।
 একদিন জুতা কারিগরের খুব আগ্রহ হলো তার জুতা সিলাইকারিকে দেখার। তাই তিনি একটা বুদ্ধি বের করলেন।  তিনি তার স্ত্রীকে বললেন - শুনো আজ আমরা ঘুমাব না আমি দেখতে চাই কে আমার জুতাগুলো তৈরই করে। 

 স্ত্রী তার কথা শুনে বললেন - আচ্ছা!  ঠিক আছে। 

তিনি যথারীতি কাপড় কেটে তার টেবিলে রাখলেন। তিনি টেবিলে একটি মোমবাতি জ্বালালেন, তারপর তিনি  আর তার স্ত্রী ঘরের  এক কোণে লুকিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন জুতা সিলাইকারীর জন্য।

ঠিক মধ্যরাতে,  কিছু ছোট মানুষ রুমে আসল। তারা জুতার টেবিলে বসল এবং কাটা চামড়াটি তাদের ছোট আঙ্গুল দিয়ে নিয়ে সেলাই করতে লাগল।
তারা অত্যন্ত নিপুণভাবে সেলাই করতে লাগল,  জুতা কারিগর অবাক হয়ে  তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল । সমস্ত বুট সেলাই না হওয়া পর্যন্ত তারা কাজ করেছিল।যখন শেষ জোড়াটি প্রস্তুত হয়ে গেল,  তখন ছোট্ট মানুষরা টেবিল থেকে লাফ দিল এবং সাথে সাথে অদৃশ্য হয়ে গেল।

কারিগর বলল - ছোট মানুষগুলো  আমাদের ধনী করেছে। আমাদের  তাদের জন্য ভালো কিছু করা দরকার।  স্ত্রী  বলল - হ্যাঁ তাই। আচ্ছা যদি আমি তাদের প্রত্যেককে একটি জ্যাকেট, একটি শার্ট এবং প্যান্ট সেলাই করে দিই আর তুমি তাদের জন্য জুতা তৈরি করে দাও, তাইলে কেমন হয়?  ছোট মানুষগুলো ছেঁড়া কাপড় পড়ে আসে, হয়তো তাদের কোন ভালো  কাপড় নেই।

তার স্বামী তার কথা শুনে বলল:

-আচ্ছা, এটা বেশ ভালো বুদ্ধি! তারা অবশ্যই আনন্দিত হবে!

এবং তারপর এক সন্ধ্যায় তারা তাদের উপহারগুলি কাটা চামড়ার পরিবর্তে টেবিলে রাখল এবং তারা নিজেরাই আবার কোণে লুকিয়ে ছোট মানুষদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।

ঠিক মাঝরাতেবরাবরের মতো ছোট মানুষগুলো রুমে এসেছিল। তারা টেবিলে ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং  তারা দেখতে পেল  টেবিলে কাটা চামড়ার পরিবর্তে লাল শার্ট, স্যুট এবং ছোট জুতা রয়েছে।

প্রথমে, ছোট মানুষগুলো অবাক হয়েছিল, এবং তারপরে তারা খুব খুশি হয়েছিল। তারা দ্রুত তাদের সুন্দর স্যুট এবং বুট পরে, নাচল এবং গাইল।  তারপর জুতা কারিগর ও তার স্ত্রী  তাদের কাছে এল। তাদের দ্বখে ছোট লোকেরা বেশ ভয় পেয়ে যায়। তাদের কারিগর বলে - তোমরা ভয় পেয় না। আমি তোমাদের ক্ষতি করব না। আমি তোমাদের ধন্যবাদ জানাতে এসেছি এবং  জানতে এসেছি তোমরা প্রতিদিন কেন আমাকে সাহায্য কর? 

ছোট মানুষগুলো বলে - আমরা তোমার বাড়ির পাশেই থাকি। তোমার এ দূরবস্থা দেখে আমরা তোমাকে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম।

এ কথা শুনে জুতা কারিগর বলল- তোমাদের অনেক ধন্যবাদ। এই উপহার গুলো আমাকে সাহায্য করার জন্য আমি তোমাদের দিলাম। তোমাদের আর আমার জন্য জুতা সেলাই লাই করতে হবে না। 

ছোট মানুষগুলো  বলল - আচ্ছা ঠিক আছে। তাইলে আমরা যাই। 

 তারপর তারা অদৃশ্য হয়ে গেল এবং আর জুতা  সেলাই করতে আসল না। জুতা কারিগরও সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।

অনুবাদক : আদিলা নুর তাবাসসুম